Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

চন্দ্রদ্বিখণ্ডনের ঘটনা সত্য

নাস্তিকের প্রশ্ন ও জবাবঃ।
**********************
প্রশ্নঃ চন্দ্রদ্বিখণ্ডনের ঘটনা সত্য নয়।বাস্তবে এমন কিছু ঘটেনি।সবই মুমিনিয় মিথ্যাচার!! বাস্তবে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে থাকলে প্রমাণ দাও?
জবাবঃ
*******
রাসুল(সাঃ) এর অসংখ্য মুজিজার মধ্যে" চন্দ্র দ্বিখণ্ডন" একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুজিজা।কুরাইশ সর্দাররা যখন তাঁর কাছে চন্দ্রদ্বিখণ্ডনের দাবী জানায় তখন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে রাসুল(সাঃ) এর আংগুলের ইশারায় চন্দ্রদ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। সে সময় এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুললেও ঘটনার ১৪০০ বছর পর একশ্রেণীর অর্ধজ্ঞানী নাস্তিক প্রশ্ন তুলছে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়ার পরেও।
বাস্তবতার আলোকে সেই ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের জবাব দেয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াস করছি।
হাদিস অনুযায়ী প্রকৃত ইতিহাসঃ
********************************
হিজরতের পূর্বে মক্কা মোআজ্জামায় আবু জেহেল, অলীদ ইবনে মুগীরা, আছ ইবনে ওয়ায়েল প্রমুখ কোরাইশ কাফের নেতৃবর্গ সমবেত হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আবেদন জানায় যে, আপনি যদি সত্য নবী হয়ে থাকেন তাহলে চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দিন। তিনি বললেন, আমি যদি (তোমাদের দাবী অনুযায়ী) এরূপ করে দিতে পারি তা হলে তোমরা কি ঈমান আনবে? তারা বলল, হাঁ, আমরা ঈমান আনব। রসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর এরূপ হওয়ার জন্য দোয়া করলেন। অর্থাৎ চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার জন্য দোয়া করলেন। তখন তাঁর নির্দেশে চাঁদ দুই টুকরা হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রত্যেক কাফেরের (উপস্থিত) নাম উচ্চারণ করে বলতে থাকেন, হে অমুক! হে অমুক!! সাক্ষী থাক। তখন উপস্থিত সকল লোকেই উত্তম রূপে প্রত্যক্ষ করল যে উভয় খ- এতই পার্থক্য হয়ে গিয়েছিল যে, উভয়ের মাঝে হেরা পর্বত দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। কাফেরগণ বলে উঠল, এটা হচ্ছে তাঁর জাদু। আবু জেহেল বলল, এটা জাদু হলে জাদুর প্রভাব কেবল তোমাদের উপরই পড়ার কথা, এটাতো হতে পারে না যে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের উপর পড়বে। আবু জেহেল আরো বলল, শহরের লোকেরা যারা তোমাদের নিকট আসবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং বিভিন্ন দিক দিগন্ত হতে যারা আসবে তাদেরকেও জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাদের আগমনের পর সকলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা সবাই বলল যে, আমরা চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার দৃশ্য অবলোকন করেছি।সুবাহানাল্লাহ!!
উপরোক্ত ঘটনার আলোকে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিশ্লেষণ করছি--
১)ঐতিহাসিক প্রমাণঃ
*********************
চেরামান পেরুমল উপমহাদেশের সর্বপ্রথম নাগরিক যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পবিত্র সাহচর্য লাভ করে সাহাবী হবার গৌরব অর্জন করেন। উনার নিবাস ছিল ভারতের কেরালা প্রদেশের মালাবার অঞ্চলের কদুঙ্গাল্লুর এলাকায়। উনি উক্ত অঞ্চলের সম্রাট ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক উনার ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রাচীন বইয়ের মধ্যে এম. হামিদুল্লাহ রচিত “মুহাম্মাদ রসূলুল্লহ” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রাজা চেরামান পেরুমল নিজ অঞ্চলে থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা বা অলৌকিক ঘটনা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেণ। এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা আরবের মক্কা নগরীতে সংগঠিত হয়। এ ঘটনা থেকে চেরামান পেরুমল অবগত হন মক্কা নগরীতে শেষ নবীর আবির্ভাব সম্পর্কে। উনি উনার পুত্রকে সম্যক অবগত হবার উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে পাঠিয়ে দেন। ঘটনা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হবার পরে উনি স্বয়ং দীর্ঘপথ ভ্রমন করে মক্কা নগরীতে গমন করে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। সেখানে মহানবীর সাহচর্যে কয়েকদিনে অবস্থান করে এবং হজ্জ পালন করে স্বীয় দেশে ফেরার পথে ওমানের ‘সালালা’ নামক অঞ্চলে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন)। এই মহাত্মা সাহাবী (রাঃ) কে সেখানেই সমাহিত করা হয়।
মহারাজা চেরামান পেরুমল মহানবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্য উপহার নিয়ে যান যা হাদীসে বর্ণিত আছে। হাদীস সঙ্কলনকারী হাকিম (রঃ) তার ‘মুস্তাদরাক’ নামক কিতাবে হাদীসটি সঙ্কলন করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ), চেরামান পেরুমল (রাঃ) কে ‘মালিকুল হিন্দ’ তথা ‘ভারতীয় মহারাজ’ বলে সম্বোধন করেন।
عن ابى سعيد الخدرى (رضى لله عنه) قال اهدى ملك الهند الى النبى (صلى الله عليه وسلم) جرة فيها زنجبيل فاطعم اصحابه قطعة قطعة واطعمنى منها قطعة
[رواه المستدرك حاكم]
হযরত আবু সাঈদ সা’দ বিন মালিক বিন সিনান আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘ভারতীয় মহারাজ নবীজী (সাঃ) এর জন্য এক বয়াম আচার নিয়ে আসলেন যার মধ্যে আদার টুকরা ছিল। নবীজী (সাঃ) সেই টুকরাগুলা তার সাহাবীদের ভাগ করে দিলেন। আমিও খাবার জন্য একটি টুকরা ভাগে পেয়েছিলাম’।
ঐতিহাসিক গ্রন্থ "কেরালোল পাথি'তে রাজা পেরুমলের আরব যাত্রা এবং রাসুল(সাঃ) এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহনের গঠনা বিস্তারিত উল্লেখ আছে। তার ইচ্ছানুযায়ী কেরলায় তার নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় যা এখনো কেরলায় বিদ্যমান এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ বলে পরিগণিত হয়।
২)NASA র তথ্যানুযায়ী  প্রমাণ--
******************************
আমরা পূর্ণচন্দ্র রাতে এর বুকে ওপর কালো গর্তেও মত যে দাগটি দেখতে পাই যা ‘মৃত সাগর’ নামে পরিচিত, এর ব্যাস প্রায় ১০০০ মাইল।
১৯৬৯ সালে এ্যাপোলো -১১ নামের একটি মার্কিন মহাকাশযানে মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরন করে। এর আগেও চাঁদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার জন্য এ্যাপোলো-১০ নামের রকেট চাঁদে পাঠানো হয় চাঁদের সর্বাধিক ছবি তুলে আনার জন্য। ঐ সময়ে চাঁদের যেই ছবি এলো, এতে দেখা যায় চাঁদের বুকচিরে একটি ফাঁটল বিদ্যমান। ফাঁটলটি লম্বায় ২০০ [কিঃমিঃ] এর ও বেশি এবং চওড়ায় ৩ [কিঃমিঃ]
বিজ্ঞানীগণ এর নাম দিয়েছেন "হাইজিনাস রিলী"।
এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পটভূমী ও নাসার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ বিষয়টির মিমাংসা করতে পারে। “সম্প্রতি চাঁদে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার প্রশ্বস্থ একটি আয়তাকার ফাটল উপত্যকার চিহ্ণ পাওয়া গেছে। এটির অবস্থান সেখানকার পৃষ্টতলের ঠিক নিচে।”
এ ব্যাপারে ললেন্স ফিৎরেজ তার চাদের বুকে মানুষ বইতে উল্লেখ করেছেন -
“চাঁদের ওই স্থানটি বহু বছর আগের কোন ফাটল উপত্যাকার ধ্বংশাবশেষ। এটি পরর্বর্তী সময়ে লাভার পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ ফাটল চাঁদে আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়।”
চাঁদে যে ফাটল আছে সেটা বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে জানা যায় । এবং সে ফাটল কে নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানিদের বিভিন্ন রকম মন্তব্য রয়েছে ।
  বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন, “চাঁদের বুকে কোনো গ্রহানু আছড়ে পড়ার কারণ সেখানে পাথুরে র্দীঘ ভাজ সৃষ্টি হয়েছিলো”।
নাসার প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত এবং চিত্রে পাওয়া যায় এই ফাটলের চিহ্ন। যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে নাসার বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা আলোচনা করেছেন।
অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি কোরআন ও হাদিসের  বর্ণনা অনুযায়ী বিজ্ঞানীগন চাঁদে ফাটলের অস্তিত্ব পেয়েছেন যদিও  তারা চন্দ্রবিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেন।
৩)যুক্তির আলোকে সত্যতা যাচাইঃ
********************************
যেকোন ঘটনার দীর্ঘদিন পরে তার সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত কঠিন। তবে যুক্তির আলোকে বিষয়ের যৌক্তিতা এবং সত্যতা যাচাই অসম্ভব নয়।
আমার প্রশ্ন,
সেই ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন এটি  মিথ্যা এমন দাবী কোন মুশরিক করেছিল? নাকি বলেছিল মুহাম্মদ(সাঃ) জাদুকর?
উত্তর হচ্ছে-
পবিত্র কুরআনের সুরা আলকামারের প্রথম দুই আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:  "কিয়ামত আসন্ন এবং চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। তারা কোনো নিদর্শন সরাসরি দেখলেও মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, ‘এতো চিরাচরিত জাদু’। "
ওই আরব মুশরিকরা এই মোজেজা অস্বীকার করে একে জাদু বলে অভিহিত করে। কিন্তু  উপস্থিত ইহুদিরা চাঁদ দুই ভাগ হওয়ার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
কিন্তু আবু জাহল বলে ওঠে, “ তিনি নজরবন্দি করেছেন। যেসব লোক বিদেশে গেছে তারা ফিরে এসে সমর্থন জানালে তখন বুঝব।” বিদেশ থেকে আসা লোকেরা দেশে ফিরে এসে এ ঘটনার সত্যতাকে সমর্থন করলেও আবু জাহল বলে, “ তিনি গোটা পৃথিবীর সব লোককে নজরবন্দী করেছেন।
অর্থাৎ -
আবুজেহেল সহ সকল মুশরিক নেতারা রাসুল(সাঃ)কে এই ঘটনার জন্য জাদুকর বলেছিল।
যদি জাদুকর দাবী করে থাকে তবে এটা কি প্রমাণ হয়না যে ঘটনা ঘটেছিল এবং মুশরিকরা এই মুজেজাকে জাদু ভেবেছিল?
অবশ্যই প্রমাণ হয়। কারন এতবড় একটা ঘটনা যা ইসলাম প্রচারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল তার কোন বিরোধীতা করেনি কোন মুশরিক। বরং তারা সত্যতা মেনে নিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মুহাম্মদ(সাঃ)কে নবী না মেনে জাদুকর বলেছিল।
যদি ঘটনা মিথ্যাহত তবে অবশ্যই তারা বলত মুহাম্মদ (সাঃ) মিথ্যাবাদী।
আর এটাই হত ইসলামের ধংসের অন্যতম কারন।
কেননা তখন তারা সকল মুসলমানকে বলত " তুমাদের নবীকে বল আবার সকলের সামনে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করে  তার বক্তব্যের প্রমাণ দিতে?"!
সাহাবারা প্রমাণ চাইত। প্রমাণ না পেয়ে ইসলাম ত্যাগ করত।
প্রশ্ন হচ্ছে এতবড সুযোগ মুশরিকরা হাতছাড়া করেছিল বলে আপনার মনেহয়?
বস্তুত,এমন ঘটনা ঘটেছিল বলেই তারা মিথ্যাবাদী না বলে জাদুকর বলেছিল।
এরপরে ঘটনার সত্যতা প্রমাণের আর কোন প্রমাণ প্রয়োজন পড়ে কি?
আশাকরি জবাবটি পেয়েছেন।

আল্লাহ্‌ সবাইকে সত্যকে মেনে নেয়ার তৌফিক দান করুন,আমিন।

Post a Comment

0 Comments