অন্যায় কাজে আল্লাহ কেন হস্তক্ষেপ করেন না??
নাস্তিকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ গুলোর একটি হল, আল্লাহ কেন চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষন ,ছিনতাই সহ সকল ধরনের অপকর্ম করতে দেন? কেন আল্লাহ এসব প্রতিহত করেন না?? তারমানে হল, আল্লাহ বলে কেও নেই! (নাউযুবিল্লাহ)
কোরআন, হাদীস না পড়ার কারনেই নাস্তিকরা এ ধরনের মন্তব্য তারা করতে পারছে!
আল্লাহ কোরআনে 30 স্থানে "পরীক্ষা" শব্দটি ব্যাবহার করেছেন ৷ বারবার তিনি বলেছেন যে এই দুনিয়া পরীক্ষার হল ছাড়া আর কিছুই নয় ৷
যেমন সূরা আল মূলকে আল্লাহ বলেন
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ (2
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।
(সূরা আল মূলক)
আল্লাহ আমাদের জীবনদান করে দেখে নিচ্ছেন কে ভাল এবং কে মন্দ ৷
পরীক্ষার হলে ভুল উত্তর লেখলে কি সঠিক উত্তর বলে দেয়া বৈধ হবে? কক্ষনো বৈধ হবে না ৷ তাই আল্লাহ তায়ালা নিজে পরীক্ষার হলে হস্তক্ষেপ করেন না ৷ তবে তিনি একেবারে ছেড়েও দেন নাই ৷
মানুষ যখন কোন অন্যায় করবে, তখন তার প্রতিরোধের দায়িত্বও দিয়ে রেখেছেন মানুষের হাতেই ৷ তার মাধ্যমে তিনি দেখবেন কে ভাল, আর কে খারাপ ৷ এবং সে অনুযায়ীই আখেরাতে পুরুষ্কার এবং তিরস্কার করবেন ৷ তবে এই পরীক্ষা শুধু আমাদের জন্যই নয়, সকল যুগের, সকল মানুষের জন্য ৷
যেমন আল্লাহ বলেন
2] أَحَسِبَ النّاسُ أَن يُترَكوا أَن يَقولوا ءامَنّا وَهُم لا يُفتَنونَ
[2] মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না ?
[3] وَلَقَد فَتَنَّا الَّذينَ مِن قَبلِهِم ۖ فَلَيَعلَمَنَّ اللَّهُ الَّذينَ صَدَقوا وَلَيَعلَمَنَّ الكٰذِبينَ
[3] আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে
(সূরা আল আন কাবূত)
সূরা কাহফ এ আল্লাহ ভাল কাজ কে করে তাও পরীক্ষা করে দেখার কথা ঘোষনা করেন ৷
إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا (7
আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।
( সূরা কাহফ)
পরীক্ষার হলের নিয়ম অনুযায়ীই আল্লাহ তায়ালা কোন মানুষের কোন ধরনের কাজেই সরাসরি বাধা দেন না ৷ যদি করতেন তবে তা কিছুতেই আর পরীক্ষা হিসেবে গন্য হতনা! ফলে পুরুস্কার দেয়ারও সুযোগ থাকত না!
প্রশ্ন আসতে পারে, অপরাধ করার সাথে সাথেই তাহলে কেন আল্লাহ শাস্তি দেন না?
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি সুন্দর নাম রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল ‘হাকীম’ অর্থাৎ প্রজ্ঞাময়। আল-কুরআনুল কারীমে এ নামটি নব্বই বারের বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও ‘আল হাকীম’ আবার কোথাও ‘হাকীম’ রূপে।
মূলত যার হিকমত আছে তিনিই হাকীম!
আল্লাহ তায়ালার হিকমত হল ‘যখন যেখানে যা প্রয়োজন’ সেটাই তিনি করেন। তার এ হিকমত বাস্তবায়নে তাকে কেউ পরাস্ত করতে পারবে না।
এ হিকমতের একটি বিষয় হল সময় ও সুযোগ প্রদান করা! আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের অত্যন্ত জঘন্য পাপ করার পরও সুযোগ দিয়ে থাকেন। যেন সে বলতে না পারে যে " হে আল্লাহ, আপনি আমাকে সময় কেন দিলেন না? "
অন্যায় করার পর আল্লাহ তাকে ছেড়ে দেন না!
তিনি বিপদ আপদ, দুঃখ কষ্ট, সংকট সমস্যা, অভাব দরিদ্রতা, রোগ ব্যধি, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, পরাজয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি তার উপর নিক্ষেপ করেন ৷ যেন সে ফিরে আসে ৷
যারা কোরআন পুড়ায় তাদের ব্যাপারে খুঁজ নিলেই এটা বুঝতে পারবেন ৷
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
[21] وَلَنُذيقَنَّهُم مِنَ العَذابِ الأَدنىٰ دونَ العَذابِ الأَكبَرِ لَعَلَّهُم يَرجِعونَ
[21] গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আস সাজদাহ, আয়াত ২১)
সূরা আলে ইমরানের ১৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ (178)
"কাফেররা যেন এটা মনে না করে যে, তাদেরকে আমি যে অবকাশ বা সুযোগ দিয়েছি তা তাদের জন্য কল্যাণকর। আসলে আমি তাদেরকে পাপের পেয়ালা পূর্ণ করারই অবকাশ দিয়েছি এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।" (৩:১৭৮)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, অবিশ্বাসীদের সুযোগ দেয়া আল্লাহর একটি বিধান ৷ এটা কাফেরদের ব্যাপারে আল্লাহর অজ্ঞতা বা অক্ষমতার লক্ষণ নয়। আল্লাহ বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, পাপী ও সৎকর্মশীল নির্বিশেষে সব মানুষকেই জীবনের পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সৎ ও পাপ কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। কাফেররা এই সুযোগের অপব্যবহার করে বলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের পাপ বৃদ্ধি পায়। তাই আল্লাহ পাপীকে তার মন মত চলার আরো সুযোগ দেন। কেউ নিতান্ত অনিচ্ছায় সৎকাজ করবে ও আল্লাহকে মানবে আল্লাহ তা চান না। কাফেররা মনে করে, এই স্বাধীনতা বা সুযোগ তাদের জন্য লাভজনক কিন্তু আসলে মন্দ কাজ ও অবিশ্বাসের পরিণতি হল পরকালের কঠোর শাস্তি।
তাদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন
19] وَيَومَ يُحشَرُ أَعداءُ اللَّهِ إِلَى النّارِ فَهُم يوزَعونَ
[19] যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুন্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবে। এবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে।
[20] حَتّىٰ إِذا ما جاءوها شَهِدَ عَلَيهِم سَمعُهُم وَأَبصٰرُهُم وَجُلودُهُم بِما كانوا يَعمَلونَ
[20] তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছাবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে ( সূরা হা মীম সাজদাহ)
একই সূরার 27 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন
27] فَلَنُذيقَنَّ الَّذينَ كَفَروا عَذابًا شَديدًا وَلَنَجزِيَنَّهُم أَسوَأَ الَّذى كانوا يَعمَلونَ
[27] আমি অবশ্যই কাফেরদেরকে কঠিন আযাব আস্বাদন করাব এবং আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের মন্দ ও হীন কাজের প্রতিফল দেব৷
তারমানে হল আল্লাহকোন অপরাধীকে ছাড় দেবেন না ৷ তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করবেনই করবেন!
সেদিন তাদেরকে সাহায্য করার কেউ থাকবেনা!তারা চিৎকার করবে, আর আফসোস করবে কিন্তু রক্ষা পাবেনা ৷
0 Comments