বিজ্ঞানময় কোরআন ও এর সত্যতা নিরূপণ ঃ
নাস্তিকদের দাবী ভ্রূণতত্ত্ব নিয়ে কোরআন ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। জ্ঞানহীন নাস্তিকদের মিথ্যাচারের জবাবের জন্যই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
ভ্রুনতত্ত্ব নিয়ে কোরআনের বক্তব্যঃ-
মহান কুদরতে অধিকারী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন
﴿ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَاَنۡزَلَ لَكُمۡ مِّنَ الۡاَنۡعَامِ ثَمٰنِيَةَ اَزۡوَاجٍؕ يَخۡلُقُكُمۡ فِىۡ بُطُوۡنِ اُمَّهٰتِكُمۡ خَلۡقًا مِّنۡۢ بَعۡدِ خَلۡقٍ فِىۡ ظُلُمٰتٍ ثَلٰثٍؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمۡ لَهُ الۡمُلۡكُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ فَاَنّٰى تُصۡرَفُوۡنَ﴾
‘তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।সূরা আয যুমার -৬
অধ্যাপক কেইথ মুরের মতে, কোরআনে উল্লেখিত অন্ধকারের তিনটি পর্দা বলতে বুঝায়ঃ
১।মাতৃগর্ভের সম্মুখ দেয়াল
২।জরায়ুর দেয়াল
৩।জরায়ুতে ভ্রূণকে আবৃতকারী গর্ভফুলের আভ্যন্তরীণ অতি পাতলা পর্দা।
পেশি ও হাড়ের গঠন :
কোরআনে বলা হয়েছে মাতৃগর্ভাষয়ে মাংশপেশী গঠিত হওয়ার আগই বাচ্চার হাড় গঠিত হয়।
১২.) আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে,
﴿ ثُمَّ جَعَلۡنٰهُ نُطۡفَةً فِىۡ قَرَارٍ مَّكِيۡنٍ﴾
১৩.) তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে টপ্কে পড়া ফোঁটায় পরিবর্তত করেছি,
﴿ ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَةَ مُضۡغَةً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَةَ عِظٰمًا فَكَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰهُ خَلۡقًا اٰخَرَؕ فَتَبٰرَكَ اللّٰهُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِيۡنَؕ﴾
১৪.) এরপর সেই ফোঁটাকে জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত করেছি, তারপর সেই রক্তপিন্ডকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর মাংসপিন্ডে অস্থি-পঞ্জর স্থাপন করেছি, তারপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিয়েছি গোশত দিয়ে, ১২ তারপর তাকে দাঁড় করেছি স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি রূপে।১৩ কাজেই আল্লাহ বড়ই বরকত সম্পন্ন,১৪ সকল কারিগরের চাইতে উত্তম কারিগর তিনি।
(সূরা মুমিনুন ২৩:১২-১৪)
কিছুদিন পূর্বেও ভ্রুণবিদ্যা জানতো যে, ভ্রুণ এর হাড় ও মাংসপেশী একই সময়ে তৈরী হয়। এখন আধুনিক এমব্র্যয়লজি(ভ্রুণবিদ্যা) এভাবে দেয়া হয়েছে "সাত সপ্তাহের মধ্যে কংকালের গঠন শেষ হয় এবং দেহের সবখানে ছড়িয়ে পরতে থাকে। এবং হাড় এর বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। অষ্টম সপ্তাহের দিকে মাংসপেশী গঠিত হতে থাকে যা হাড়ের চারপাশে অবস্থান নিতে থাকে।" Keith Moore (developing Human, 6 part)-1998 অর্থাৎ মানুষের জন্ম ঠিক সেভাবেই হয় যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে।
১৬৭৭ সালে, সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী হাম এবং লিউওয়েন হোয়েক মাইক্রোষ্কোপ দ্বারা মানবীয় শুক্র কোষ পর্যবেক্ষণ করেন।তারা ভেবেছিলেন যে,শুত্রুকোষ যা ক্ষুদ্রকৃতির মানুষ হিসেবে বিবেচ্য তা নতুন শিশু জন্মের জন্য জরায়ুতে বিকাশ লাভ করে।এটা perforation তত্ব হিসেবে পরিচিত।কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন আবিষ্কার করলেন যে শুক্রের চাইতে ডিম বড়,তখন বিজ্ঞানী ডি গ্রাফ সহ অন্যরা ভাবলেন যে,ডিমের মধ্যে ভ্রূণ ক্ষুদ্রাকৃতিতে অবস্থান করে।পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৮০০ শতাব্দীতে,বিজ্ঞানী মাওপেরটুইস মাতা পিতার দ্বৈত উওরাধিকার তত্ব (theory of biparental inheritence)প্রচার করেন।(আরবী) পরে (আরবী) -য় রূপান্তরিত হয়। মুদগাহ’র অর্থ হল, ১। যা দাঁত দিয়ে চিবানো হয় এবং ২। যা আঠালো ও ছোট এবং যা মুখে দেয়া হয় । যেমন গাম । এই দুটিই ব্যাখ্যাই বৈজ্ঞানিক ভাবে বিশুদ্ধ । অধ্যাপক কেইথ মুর প্লাষ্টার সীল সিল নিয়ে একে ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ের আকৃতির মত বানিয়ে দাঁত চিবান এবং একে মুগদায় পরিনত করার চেষ্টা করেন। তিনি এর মাধ্যমে এর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রূণের ছবিকে তুলনা করেন। তার চিবানো ঐ প্লাষ্টার সীল somites এর মত দেখা গেল যা মেরুদণ্ডের প্রাথমিক গঠন স্তর।
মার্কিন নাগরিক ও বিজ্ঞানী মার্শাল জনসন ভ্রুনতত্ত্ব সম্পর্কিত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, "ভ্রণের বিকাশের
পর্যায়গুলো সম্পর্কে কোরআনের এ বাস্তবতা আবিস্কার করা সম্ভব। কোরআন হল দেড় হাজার বছর আগের
গ্রন্থ। সে সময় কোন মাইক্রোসকোপের অস্তিত্ব ছিল না।তখনও মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃতই হয়নি। কোরআন নাজিলের বহু বছর পরে যখন মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃত হল তখন ওই মাইক্রোস্কোপ কোন বস্তুকে ১০ গুণের বেশি বড় করতে পারতো না এবং স্বচ্ছতাও কম ছিল কাজেই কোরআনের বানী মানুষের হতে পারে না"
দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি : কোনটা আগে ?
﴿ ثُمَّ سَوّٰٮهُ وَنَفَخَ فِيۡهِ مِنۡ رُّوۡحِهٖ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمۡعَ وَالۡاَبۡصَارَ وَالۡاَفۡـِٕدَةَؕ قَلِيۡلاً مَّا تَشۡكُرُوۡنَ﴾
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা সেজদাহ ৩২: ০৯)।
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা ইনসান ৭৬: ০২)।
অর্থাৎ কোরআন বলছে মানুষ আগে শ্রবণশক্তি আর তারপর দৃষ্টিশক্তি পায়। আসলে কি তাই? চলুন দেখি বিজ্ঞানীরা কি বলেন-
বিজ্ঞান বলে-
গর্ভে পাচ মাস থাকার পর ভ্রুনের শ্রবন ইন্দ্রিয় তৈরী হয় পরবর্তিতে সাত মাস থাকার পর ভ্রুনের চোখ তৈরী হয়।
কি ধ্রুব-বিজ্ঞানময় এই কোরআন! সুবাহানাল্লাহ! নিশ্চয়ই মাওলা সকল কারিগর থেকে উত্তম কারিগর!!
1 Comments