আল্লাহ, প্রশ্ন ফাঁস করে কি আদমকে ( আঃ) শ্রেষ্ঠ করেছে ?
নাস্তিকদের সবচেয়ে কমন অভিযোগ হল, " আল্লাহ প্রশ্ন ফাঁস করে আদম ( আঃ) কে পরীক্ষায় জয়ী করে এবং ফেরেশতাদের পরাজিত করে ৷ (নাউজুবিল্লাহ) তারপর ফেরেশতাদের সেজদা দিতে বাধ্য করে এবং আদমকে ( আঃ) শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষনা করেন ৷
আসলে কি এমন হয়েছে?
200% ভুল এবং অপব্যাখ্যা এটা ৷
একমাত্র যে জীবনে কোরআন ,হাদীস জীবনে পড়েনি, এমন লোকদের পক্ষেই এমন দাবি করা সম্ভব ৷ কারন আদম আঃ কে সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের জানিয়ে দেন যে যখন আদমকে (আঃ) রুহ ফুঁকে দেয়া হবে তখনই যেন ফেরেশতারা আদমকে (আঃ) সেজদা করে ৷ তাহলে কিসের পরীক্ষা? কিসের জয়লাভ? কিসের পরাজয়???কিসের প্রতারনা?
সূরা হিজরে আল্লাহ বলেন
[28] وَإِذ قالَ رَبُّكَ لِلمَلٰئِكَةِ إِنّى خٰلِقٌ بَشَرًا مِن صَلصٰلٍ مِن حَمَإٍ مَسنونٍ
[28] আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।
[28] And (remember) when your Lord said to the angels: "I am going to create a man (Adam) from dried (sounding) clay of altered mud.
[29] فَإِذا سَوَّيتُهُ وَنَفَختُ فيهِ مِن روحى فَقَعوا لَهُ سٰجِدينَ
[29] অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো।
(সূরা হিজর)
তারপরও যেসকল আয়াত দিয়ে এই অপব্যাখ্যা করে তা নিম্নে আলোচনা করা হল ৷
সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেন
30] وَإِذ قالَ رَبُّكَ لِلمَلٰئِكَةِ إِنّى جاعِلٌ فِى الأَرضِ خَليفَةً ۖ قالوا أَتَجعَلُ فيها مَن يُفسِدُ فيها وَيَسفِكُ الدِّماءَ وَنَحنُ نُسَبِّحُ بِحَمدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قالَ إِنّى أَعلَمُ ما لا تَعلَمونَ
[30] আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
(সূরা বাকারা)
দেখুন, আদমকে আঃ সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ আদম এবং সন্তানদের খলিফা হিসেবে ঘোষনা করেছেন ৷ খলিফা শব্দটির অর্থ বুঝেন? খলিফা ওমর, খলিফা আবু বকর রাঃ, শব্দ গুলো দিয়ে কি বুঝেন? যখন সকলের নেতা হয়,তখনই খলিফা বলার সুযোগ রয়েছে ৷
আল্লাহ তায়ালা আদমকে সৃষ্টির পূর্বেই খলিফা বানাবেন বলাতে কি প্রমাণ হয়?
ফেরেশতাদের জবাব লক্ষ্য করুন ৷ উনারা এর বিরোধিতা করছেন এবং বলছেন যে আদম এর বংশধরেরা পৃথিবীতে দাঙ্গা হাঙ্গামা করবে ৷
আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জাননা ৷
এর পরের আয়াতে বলা হয়েছে
31] وَعَلَّمَ ءادَمَ الأَسماءَ كُلَّها ثُمَّ عَرَضَهُم عَلَى المَلٰئِكَةِ فَقالَ أَنبِـٔونى بِأَسماءِ هٰؤُلاءِ إِن كُنتُم صٰدِقينَ
[31] আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
দেখুন এই আয়াতে বলছেন, যে সত্যবাদী হলে আমাকে এগুলোর নাম বল!
বলেনাই , " দেখ আজ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হবে কিংবা তোমাদের পরীক্ষা করা হবে কে শ্রেষ্ঠ! "
কারন, খলিফা হিসেবে আদম এবং তার সন্তানদের আগেই ঘোষনা করা হয়ে গেছে ৷
বরং ফেরেশতা কি বলেছে লক্ষ্য করুন ৷ তারা বলছে, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি আমরা জানি না ৷
তারমানে কি বুঝলেন?
মূলত ফেরেশতাদের ও আল্লাহ তায়ালা অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছেন ৷কিন্তু আদম কে যা শিখিয়েছেন তা ফেরেশতাদের শিক্ষা দেন নাই এবং ফেরেশতাদের যা শিখিয়েছেন, তা আদমকে শিক্ষা দেন নাই ৷
এর দ্বারাই আল্লাহ তায়ালা বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে জীন, ফেরেশতা এবং আদমের কাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ এবং ফেরেশতারা যেই আশংকা করেছিল, তাও সঠিক নয় ৷
মূলত, একজন ডাক্তার যা শিখে, তা ইঞ্জিনিয়ার তা শিখে না ৷ একজন ইঞ্জিনিয়ার যা শিখে তা একজন কাঠ মিস্ত্রি শিখে না ৷ প্রত্যেকের কাজ এবং শিক্ষা ভিন্ন ৷ কোন ভাল শিক্ষক সকল ধরনের ছাত্রকে একই ধরনের শিক্ষা দিতে পারে না
33 নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন
33] قالَ يٰـٔادَمُ أَنبِئهُم بِأَسمائِهِم ۖ فَلَمّا أَنبَأَهُم بِأَسمائِهِم قالَ أَلَم أَقُل لَكُم إِنّى أَعلَمُ غَيبَ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ وَأَعلَمُ ما تُبدونَ وَما كُنتُم تَكتُمونَ
[33] তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর!( সূরা বাকারা )
দেখুন, এই আয়াতে আদমকে বললেন সকল কিছু বলার জন্য এবং আদম তা বলেদিল ৷ তখন আল্লাহ তায়ালা 30 নাম্বার আয়াতের কথা স্মরন করিয়ে দিল ৷ বলল, দেখ আমি যা জানি তা তুমরা তা জাননা ৷
এই কথা বলে আল্লাহ বুঝাতে চেয়েছেন যে আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা, ফেরেশতাদের ধারনার মত নয় ৷ বরং সম্পূর্ণ অন্যরকম!
কিন্তু একবারও বলেন নাই, যে তোমরা আদমের কাছে পরাস্ত হয়েছ! এবং ফেরেশতারা ও কখনও আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দাবি করে নাই ৷
তাহলে কেন হবে শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা?
এ ব্যাপারে আরও ভাল ভাবে বুঝার জন্য আমরা সূরা হিজরের আয়াতের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারি
12] قالَ ما مَنَعَكَ أَلّا تَسجُدَ إِذ أَمَرتُكَ ۖ قالَ أَنا۠ خَيرٌ مِنهُ خَلَقتَنى مِن نارٍ وَخَلَقتَهُ مِن طينٍ
[12] আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।
[13] قالَ فَاهبِط مِنها فَما يَكونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فيها فَاخرُج إِنَّكَ مِنَ الصّٰغِرينَ
[13] বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।
এই আয়াতটি দেখতে পারেন ৷ এখানে নাস্তিকদের বক্তব্য অনুযায়ী পরীক্ষার পর শয়তান কি বলছে??
আমি শ্রেষ্ঠ!! কেন বলল? সেতো পরীক্ষায় ফেইল করেছে? তাহলে শ্রেষ্ঠ রইল কি ভাবে? মূলত শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা নেয়াই হয় নাই ৷ যদি তাই হত, তবে ফেইল করার পর ইবলিস নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবি করতে পারত না ৷
অতএব, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে পাস করার ধারনা মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয় ৷
কোরআন ভাল ভাবে না পড়ার কারনে, নাস্তিকরা এই ধারনা করছে ৷
পরিশেষে বলছে চাই,
(1) আদম আঃ কে সৃষ্টির অনেক আগেই সেজদা করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা ৷
(2) কোন ধরনের পরীক্ষা নিয়ে আদমকে ( আঃ) শ্রেষ্ঠ বানানো হয় নাই ৷
( 3) তাই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করার প্রশ্নই আসে না ৷
(4) আদমকে ( আঃ) সৃষ্টির আগেই খলিফা হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে
অতএব নাস্তিকদের প্রশ্ন ফাঁসের দাবি সম্পূর্ন ভিত্তিহীন ৷
0 Comments