Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

সূরা ফিলে ভুল তথ্য দেয়া।আবাবিল পাখির ছুড়া পাথরে ফোসকাও পড়ার কথা না! জবাব:

Counter postঃ
গতকাল নাস্তিক গ্রুপের এডমিন পোষ্ট দিল কোরআনে অসত্য তথ্য আছে কারন সূরা ফিল এ বর্ণিত তথ্য সঠিক নয়। কেননা সামান্য পাখির বহনকৃত পাথরে হাতিরমত বিশাল প্রাণী দূরে থাক একটা মশাও মরার কথা না!!

জবাবঃ
''সূরাহ্‌ ফিল'' এর সাধারন অর্থ-----------
১আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন?
২। তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি?
৩। তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী,
৪। যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল।
৫। অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।

পিছনের ইতিহাসঃ- ইয়েমেনের শাসক আবরাহা ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা আক্রমন করেছিলেন।এই বাহিনীতে কয়েকটা হাতি ছিল, তাই তাদের নাম হয়ে গিয়েছিল হস্তি বাহিনী ।আবরাহা মক্কা আক্রমন করেছিল রাসুল সাঃ এর জন্মের কিছুদিন আগে।জন্মের পরে শিশু বয়সে হলেও তাঁর দেখার কথা না,আর এখানে তো দেখার প্রশ্নই আসেনা।বিষয়টা এরকম _ ঘটনাটা মুখে মুখে প্রচলিত ছিল, কোন ভাবেই অতীত হয়ে যাচ্ছিল না,আর চাক্ষুষ দেখেছে এমন অনেক লোক বর্তমান ছিল।

আব্রাহার বাহিনী যখন মক্কার কাছাকাছি অবস্থানে । মক্কাবাসী বুঝতে পারছিল, এ শক্তির মোকাবেলা করার সাধ্য তাদের নেই।তারা কাবাগৃহে সমবেত হয়ে প্রার্থনা করতে লাগল , এক আল্লাহ্‌র কাছে । কাবাগৃহে সে সময় তারা বিভিন্ন দেবদেবী সংরক্ষন করেছিল। বিপদাপদে তাদের স্বরনাপন্ন হতো ।কিন্তু কাবাঘর ধ্বংস করতে এসেছে কেউ , সাথে চিরতরে খর্ব হয়ে যাবে কোরাইশদের আধিপত্য। তারা কেউ দেব দেবীর সাহায্য প্রার্থনা করেনি!
"
রাসুল সাঃ এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ব্যক্তিত্ববান,সুশ্রী চেহারার অধিকারী ছিলেন।তার উট আব্রাহার সৈনিকরা ধরে নিয়ে গেল! তিনি আব্রাহার কাছে গিয়ে নিজের উট ফেরত চাইলেন। আব্রাহা যারপরনাই বিস্মিত হলেন। সিংহাসন ছেড়ে যার পাশে এসে কথা শুনছেন, তাকে ঠিক বিবেচনায় নিতে পারছিলেন না।বললেনঃ 'আমি আপনাদের কাবা ঘর ধ্বংস করতে এসেছি,আর আপনি আমার কাছে এসেছেন কিছু উটের দাবি নিয়ে' ?

জবাবে আব্দুল মুত্তালিব জানালেন
"আমি তো কেবল আমার উটের মালিক এবং সেগুলির জন্য আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি । আর এই ঘর। এর একজন রব-মালিক ও প্রভু আছেন। তিনি নিজেই এর হেফাজত করবেন!"

মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, আবরাহার সেনাদলের কাছ থেকে ফিরে এসে আবদুল মুত্তালিব কুরাইশদেরকে বলেন, নিজেদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে পাহাড়ের ওপর চলে যাও, এভাবে তারা ব্যাপক গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তারপর তিনি ও কুরাইশদের কয়েকজন সরদার হারাম শরীফে হাযির হয়ে যান। তারা কা’বার দরজার কড়া ধরে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে থাকেন যে, তিনি যেন তাঁর ঘর ও তাঁর খাদেমদের হেফাজত করেন। সে সময় কা’বা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। কিন্তু এই সংকটকালে তারা সবাই এই মূর্তিগুলোর কথা ভুলে যায়। তারা একমাত্র আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য হাত ওঠায়। ইতিহাসের বইগুলোতে তাদের প্রার্থনাবাণী উদ্ধৃত হয়েছে তার মধ্যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে আবদুল মুত্তালিবের নিম্নোক্ত কবিতাসমূহ উদ্ধৃত করেছেনঃ

“হে আল্লাহ! বান্দা নিজের ঘর রক্ষা করে
তুমিও তোমার ঘর রক্ষা করো।”

“আগামীকাল তাদের ক্রুশ ও তাদের কৌশল যেন
তোমার কৌশলের ওপর বিজয় লাভ না করে।”

“যদি তুমি ছেড়ে দিতে চাও তাদেরকে ও আমাদের কিবলাহকে
তাহলে তাই করো যা তুমি চাও।”

সুহাইলী ‘রওযুল উনুফ’ গ্রন্থে এ প্রসংগে নিম্নোক্ত কবিতাও উদ্ধৃত করেছেনঃ

“ক্রুশের পরিজন ও তার পূজারীদের মোকাবিলায়
আজ নিজের পরিজনদেরকে সাহায্য করো।”

আবদুল মুত্তালিব দোয়া করতে করতে যে কবিতাটি পড়েছিলেন ইবনে জারীর সেটিও উদ্ধৃত করেছেন। সেটি হচ্ছেঃ

“হে আমার রব! তাদের মোকাবিলায় তুমি ছাড়া কারো প্রতি আমার আশা নেই, হে আমার রব! তাদের হাত থেকে তোমার হারমের হেফাজত করো। এই ঘরের শত্রু তোমার শত্রু, তোমার জনপদ ধ্বংস করা থেকে তাদের বিরত রাখো।”

এ দোয়া করার পর আবদুল মুত্তালিব ও তার সাথীরাও পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরের দিন আবরাহা মক্কায় প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে যায়। কিন্তু তার বিশেষ হাতী মাহমুদ ছিল সবার আগে, সে হঠাৎ বসে পড়ে। কুড়ালের বাঁট দিয়ে তার গায়ে অনেকক্ষণ আঘাত করা হয়। তারপর বারবার অংকুশাঘাত করতে করতে আহত করে ফেলা হয়। কিন্তু এত বেশী মারপিট ও নির্যাতনের পরেও সে একটুও নড়ে না। তাকে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে মুখ করে চালাবার চেষ্টা করলে সে ছুটতে থাকে কিন্তু মক্কার দিকে মুখ ফিরিয়ে দিলে সংগে সংগেই গ্যাট হয়ে বসে পড়ে। কোন রকমেই তাকে আর একটুও নড়ানো যায় না।

এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা ঠোঁটে ও পাঞ্জায় পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে। তারা এ সেনাদলের ওপর পাথর বর্ষণ করতে থাকে। যার ওপর পাথর কণা পড়তো তার দেহ সংগে সংগে গলে যেতে থাকতো। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ও ইকারামার বর্ণনা মতে, সেটা ছিল বসন্ত রোগ এবং আরব দেশে সর্বপ্রথম এ বছরই বসন্ত দেখা যায়। ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনা মতে যার ওপরই পাথর কণা পড়তো তার সারা গায়ে ভীষণ চুলকানি শুরু হতো এবং চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ছিঁড়ে গোশত ও রক্ত পানির মতো ঝরতে থাকতো এবং হাড় বের হয়ে পড়তো। আবরাহা নিজেও এই অবস্থার সম্মুখীন হয়। তার শরীর টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়তো এবং যেখান থেকে এক টুকরো গোশত খসে পড়তো সেখান থেকে রক্ত ও পুঁজ ঝরে পড়তে থাকতো। বিশৃঙ্খলা ও হুড়োহুড়ি ছুটাছুটির মধ্যে তারা ইয়ামনের দিকে পালাতে শুরু করে। খাশ’আম এলাকা থেকে যে নুফাইল ইবনে হাবীব খাশ’আমীকে তারা পথপ্রদর্শক হিসেবে নিয়ে আসে তাকে খুঁজে পেয়ে সামনে নিয়ে আসা হয় এবং তাকে ফিরে যাবার পথ দেখিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু সে সরাসরি অস্বীকার করে বসে। সে বলেঃ
“এখন পালাবার জায়গা কোথায় যখন আল্লাহ নিজেই করছেন পশ্চাদ্ধাবন? আর নাককাটা আবরাহা পরাজিত সে বিজয়ী নয়।”

এই পলায়ন তৎপরতার মধ্যে লোকেরা পথে ঘাটে এখানে সেখানে পড়ে মরতে থাকে। আতা ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন তখনই এক সাথে সবাই মারা যায়নি। বরং কিছু লোক সেখানে মারা পড়ে আর দৌড়াতে দৌড়াতে কিছু লোক পথের ওপর পড়ে যেতে থাকে। এভাবে সারাটা পথে তাদের লাশ বিছিয়ে থাকে। আবরাহাও খাশ’আম এলাকায় পৌঁছে মারা যায়।

সবশেষে আমার প্রশ্ন ঃ

১)এটি মক্কায় অবতীর্ণ সূরা! যদি এ সূরায় উল্লেখিত তথ্য মিথ্যা হত তবে কি মুশরিকরা সাথে সাথে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতনা?
২)যদি এটি মিথ্যা হত তবে  যারা মুসলমান হয়েছিল সমস্ত নির্যাতন সহ্য করেছিল দ্বীনের জন্য, পরকালে মুক্তির জন্য এমনকি নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল হাসতে হাসতে তারা কি তা করত?
৩)আরবের মুশরিকেরা মিরাজের ঘটনা অস্বীকার করে প্রশ্ন তুলেছিল কিন্তু সুরা ফিলের বর্ণিত ঘটনার কি কোন বিরোধিতা করেছিল?

যদি চাক্ষুস স্বাক্ষীরা বিরোধিতা না করে থাকে তবে ১৫০০ বছর পরে সেই বিষয়ের বিরোধিতা করা কি মূর্খতা ও জ্ঞানহীনতার পরিচয় বহন করেনা?

Post a Comment

0 Comments