বিজ্ঞানময় কোরআন ও এর সত্যতা নিরূপণ (পর্ব-২)ঃ
আল্লাহ্পাক কোরআনুল করিমে বলেন-
﴿ وَّالۡجِبَالَ اَوۡتَادًاۙ﴾
পাহাড়গুলোকে গেঁড়ে দিয়েছি পেরেকের মতো?( নাবা-৭)
এখানে ব্যাবহৃত শব্দটি হচ্ছে" আওতাদা" এর অর্থ পেরেক বা খুটি।
পেরেকের কাজ হচ্ছে কোন কিছুকে শক্তভাবে আটকে রাখা বা তাদের বিচ্যুতি রোধ করা।
এই আয়াতের বিশেষত্ব বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে পৃথিবীর গঠন ও পর্বত গুলোর কাজ কি!
পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের গঠনঃ
‘টেকটোনিক প্লেট’। প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে টেকটোনিক প্লেট তৈরি হয়, ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ও খনিজ পদার্থ নিয়ে(২)।
পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ার স্তরে এর অবস্থান, আরো স্পষ্ট করলে, টেকটোনিক প্লেট নিয়েই লিথোস্ফিয়ার গঠিত। এর সুনির্দিষ্ট কোন আকার নেই, দৈর্ঘ্যে ১৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মহাসাগরের নিচের প্লেট; মহাদেশেরগুলোর তুলনায় অনেক কম গভীর হয়ে থাকে। পুরো পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটকে প্রধাণত সাত-আট ভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়াও অসংখ্য ছোট-ছোট প্লেট আছে। প্লেটগুলো চলমান, খুবই ধীরগতিতে; বছরে সর্বোচ্চ ১০০ মিলিমিটারের মত(৩)। এতটুকু নড়াচড়াতেই কিন্তু ওপরে প্রলয়ঙ্করী সুনামি, ভূমিকম্প ঘটে যায়!
পৃথিবীতে সাগর-মহাসাগর ও পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনে অনবরত গবেষণা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে ভূগর্ভস্থ প্রস্তরময় দুটি প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভূপৃষ্ঠ স্ফীত হয়ে পর্বতের সৃষ্টি। হিমালয় পর্বতমালা এর অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু ভূগর্ভের ঠিক কতটা নিচে দুই প্লেটের ওই সংঘর্ষ হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি এত দিন। তবে নতুন এক গবেষণায় ভূতাত্তি্বকরা সেই গভীরতা নির্দিষ্ট করেছেন, যাকে তারা হিমালয়ের ভিত্তিমূল হিসেবে দাবি করছেন। ভূতাত্তি্বকদের মতে, প্রায় ৯ কোটি বছর আগে জ্বলন্ত কোরকের ওপর ভেসে বেড়ানো দুটি প্রস্তরময় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষস্থল ছিল আজকের ভারত ও এশীয় অঞ্চলের ভূগর্ভ। ওই সংঘর্ষের ফল হিমালয় পর্বতমালা। নতুন গবেষণার ফলাফলের বরাত দিয়ে জিওলজি সাময়িকীর মে মাসের সংস্করণে বলা হয়, ভূগর্ভে বৃহত্তর এশীয় প্লেটের চাপে ভারতীয় প্লেটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ১৫৫ মাইল নিচে চলে যায়। আগে দুই প্লেটের সংঘর্ষস্থলের যে গভীরতা ধারণা করা হতো, তার চেয়ে নতুন হিসাবের গভীরতার মাত্রা দ্বিগুণ। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টারের অঞ্জু পাণ্ডে বলেন, 'ভূগর্ভস্থ ওই ওলটপালট যে হিমালয়ের এত নিচে সংঘটিত হয়, তা এর আগে কখনো জানা যায়নি।' পাণ্ডে ও তাঁর সহকর্মীরা বলছেন, ওই সংঘর্ষস্থলেই হিমালয়ের মূল ভিত রচিত হয়। সংঘর্ষের ফলে পাথর ও মেজরাইট নামে এক ধরনের খনিজ পদার্থের সংমিশ্রণে নতুন একটি স্তর তৈরি হয়। ওই স্তরের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়। সূত্র : লাইভ সায়েন্স অনলাইন।
“Earth” নামক বইটি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিষয়ে প্রাথমিক ও মৌলিক রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। এ বইয়ের অন্যতম লেখক হলেন ড. ফ্রাঙ্ক প্রেস, যিনি ১২ বছর ধরে অ্যামেরিকার বিজ্ঞান একাডেমীর প্রসিডেন্ট এবং প্রাক্তন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। এ বইয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে পাহাড়-পর্বত হচ্ছে পেরেকাকৃতি বিশিষ্ট এবং এগুলো অবিভক্ত বস্তুর এক ক্ষুদ্র অংশ মাত্র, যার মূল মাটির গভীরে প্রোথিত। তার মতে, ভূপৃষ্ঠের আবরনকে স্থিতিশীল রাখতে পাহাড়-পর্বতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কারন পর্বত গুলো দুটি প্লেটের মাঝে থেকে তাদের সংঘর্ষ রোধে করে এবং তাদের বিচ্যুতিও আটকে দিতে সহায়তা করে।
উদাহরণ সরুপ বলা যায় হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃংগের উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার কিন্তু এটি মাটির গভীরে প্রোথিত আছে ১৫৫ কিঃমিঃ। যাকে একটা দৈত্যাকার পেরেকের সাথেই তুলনা করা যেতে পারে। আর এটি অবস্থান করছে দুটি প্লেটের মাঝখানে ফলে এদুটি প্লেটের সংঘর্ষ বা বিচ্যুতি রোধ করছে!
উপরুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে যে ফলাফলে উপনিত হতে পারি তাহচ্ছে--
পাহাড় পর্বত গুলো মাটির গভীরে প্রোথিত হয়ে পেরেকের ন্যায় প্লেট গুলোকে আটকে রাখছে ও তাদের বিচ্যুতি বা সংঘর্ষ রোধ করছে।
যা কোরআন এর দাবীকে ১০০% সমর্থন করছে!! প্রায় ১৫০০ বছর আগে কিভাবে কোরআনে আসল এই বৈজ্ঞানিক তথ্য? কোন মানুষের পক্ষেকি আদৌ সম্ভব ছিল এইতথ্য সন্নিবেশের?
এরপরেও কি কেউ অবিশ্বাস করতে পারে এটি মানুষের রচিত বলে?
#বিজ্ঞানময় কোরআন
0 Comments