Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই এবং পূর্ব নির্ধারিত হয়। তাহলে মানুষের দোষ কোথায়? মানুষের ইচ্ছার মূল্য কোথায়? জবাবঃ

ভাগ্য কি অপরিবর্তনিয়? কি বলে ইসলামঃ

এই প্রশ্নটি অনেক পুরাতন। ইসলামের অনেক আগে থেকেই প্রশ্নটি প্রচলিত আছে। ভাগ্য কি নির্ধারিত থাকে নাকি মানুষ ভাগ্য গড়তে পারে। এখনও এই প্রশ্নটি টেনে আনা হয়। এখনও আমরা এর জবাব খুজি ও বিভ্রান্ত হই। ভাগ্য হল নির্ধারিত ভবিশ্যত। এটা আগেই নির্ধারিত থাকে। সেই এটাও সত্য যে মানুষের কর্মও এই ভাগ্যের জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে যে কারনে প্রশ্নটি আসে তা হল - একজন ব্যাক্তি যদি পাপ করে, সেটা আগেই নির্ধারিত থাকে। তাহলে ওই ব্যাক্তি দায়ী কেন বা পরোকালে তার সাজা হবে কেন? ভাগ্য আগেই নির্ধারিত থাকে - মানুষের কর্ম ভাগ্যের জন্য দায়ী। এই কথা দুটি পরস্পর বিরোধী কথা। এই দুই রকমের কথা একসাথে কিভাবে সত্য হয়? কোরআনে এই দুই পক্ষেই আয়াত আছে।

ভাগ্য কি নির্ধারিত থাকেঃ
*************************
আল-কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেনঃ-

- পৃথিবীতে বা ব্যাক্তিগতভাবে তোমাদের উপরে যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংগঠিত করিবার পুর্বে উহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ (৫৭;২২)

- অদৃশ্য কুঞ্জি (চাবি) তাঁহার নিকট রহিয়াছে, তিনি ব্যাতিত অন্য কেহ তাহা জানে না। জলে ও স্থলে যাহা কিছু আছে তাহা তিনি অবগত, তাঁহার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকনাও অঙ্কুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুস্ক এমন কোন বস্তু নাই যাহা সুস্পস্ট কিতাবে নাই (৬;৫৯)

- আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি উহা পরিজ্ঞাত পরিমানেই সরবরাহ করিয়া থাকি (১৫;২১)

- ...আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞাময়

- বল, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ। তুমি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যাহার নিকট হইতে ইচ্ছা ক্ষমতা কাড়িয়া লও; যাহাকে ইচ্ছা তুমি ইজ্জত দান কর, আর যাহাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যান তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

মানুষ কর্ম ও চেস্টায় ভাগ্য পরিবর্তন হয়ঃ (আল - কোরআন)

- ... এবং আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষন না উহারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে ...।(১৩;১১)

- ... কাহাকেও আমি প্রেথিত করিয়াছিলাম ভুগর্ভে এবং কাহাকেও করিয়াছিলাম নিমিজ্জিত। আল্লাহ তাহাদের প্রতি জুলুম করে নাই; তাহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল। (২৯;৪০)

- ... অতঃপর উহা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল , ফলে তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য আল্লাহ তাহাদেরকে স্বাদ গ্রহন করাইলেন ক্ষুধা ও ভীতি আচ্ছাদনের। (১৬;১২২)

- ... যে সতকর্ম করে সে নিজের কল্যানের জন্যই উহা করে এবং কেহ মন্দ কর্ম করিলে উহার প্রতিফল সে-ই ভোগ করিবে। তোমার প্রতিপালক তাঁহার বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না(৪১;৪৬)

- আমি তাহাকে পথের নির্দেশ দিয়াছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হইবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হইবে। (৭৬;৩)

- বল, সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে ; সুতরাং যাহার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যাহার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক ... (১৮;২৯)

- মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে ... (৩০;৪১)

কোরআনে একদিকে বলা আছে বিপর্যয় লিপিবদ্ধ থাকে, অন্যদিকে বলা আছে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় হয়। একদিকে বলা আছে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎ পথে পরিচালিত করেন, অন্যদিকে বলা আছে বিশ্বাস করুক বা নাই করুক। একদিকে বলা আছে যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন, অন্যদিকে বলা আছে অস্বীকারকারীকে শাস্তি দেওয়ার কথা। দুই পক্ষেই কথা বলা আছে কোরআনে। কোরআনে যখন আছে, এই দুটি পক্ষই সত্য। এখন এই দুই পক্ষের সমন্বয় করতে হলে আমার যুক্তিতেই ফিরে আসতে হবে।

ভাগ্য হল নির্ধারিত ভবিষ্যত ও তার ফলাফল। এর সবই নির্ধারিত। ধরুন, আপনি এই মুহুর্তে একটি চেয়ারে বসে এই লেখা পড়ছেন। আগামী এক মিনিটে আপনি কি কি করতে পারেন এর সবই নির্ধারিত আছে। এটা নির্ধারিত আছে যে আপনি চেয়ার ছেড়ে অন্য কোন ঘরে যাবেন। এটা নির্ধারিতে আছে যে আপনি চেয়ারের হাতল ধরে নড়াবেন। এটা নির্ধারিত আছে যে আপনি গুন গুন করে গান গাইবেন। এটা নির্ধারিত আছে আপনি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করবেন। এটা নির্ধারিত আছে আপনি মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে কাউকে ফোন করবেন। যা যা করতে পারেন, তার সবই নির্ধারিত আছে। কনটা করার ফলাফল কি হবে সেটাও নির্ধারিত। তাহলে কি নির্ধারিত নেই? আপনি চেয়ারের এক ফুট উপরে শুন্যে ভেসে থাকবেন, সেটা নির্ধারিত নেই। আপনি চেয়ারকে চা খাওয়াবেন , এটা নির্ধারিত নেই। আপনি প্লাস্টিকের পানির বোতলকে স্বর্নের বানিয়ে ফেলবেন, এটা নির্ধারিত নেই। অর্থাৎ সে সব জিনিস আপনার পক্ষে করা অসম্ভব, তার কোনটাই নির্ধারিত নেই। আর যে সব আপনার দ্বারা করা সম্ভব - তার সবই নির্ধারিত আছে আপনার ভাগ্যে বা ভবিশ্যতে। আসলে নির্ধারিত আছে বলেই সেটা আপনি করতে পারছেন, নইলে সেই কাজটা করতেই পারতেন না। আপনি শুন্যে ভেসে থাকবেন এটা নির্ধারিত নেই, তাই এটা করতে পারেন না।

আশা করি "নির্ধারিত" জিনিসটা বোঝাতে পেরেছি। একজন লোককে আপনি চড় দিবেন সেটাও নির্ধারিত, আবার তাঁকে চুমু দিবেন সেটাও নির্ধারিত। এই দুই নির্ধারিত ভবিশ্যতের মধ্যে কোনটা বেছে নিবেন সেটা আপনার ব্যাপার। হাজার হাজার নির্ধারিত ভবিশ্যতের মধ্যে থেকে একটা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমাদেরকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এই বেছে নিতে আল্লাহ আমাদেরকে বাধ্য করেন না। যেটা বেছে নিব, তার দোষ গুন সবই আমাদের নিজের। আল্লাহ আমাদেরকে বেছে নিতে বাধ্য করলে পরকালে কোন বিচারের দরকার হোত না। আমরা কোনটা বেছে নেই তার উপরেই তো আমাদের পাপ পুন্য নির্ভর করে। তার উপরেই বিচার হবে।

তবে এই কথার শেষে আর একটা কথা যোগ করতে হয়। সেটা হল, আল্লাহর ক্ষমতা, শক্তি , সন্মান যে কত বড় সেটা বোঝা বা বর্ননা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। শেষ বিচারের সময় শাস্তি থেকে বাচতে অনেকেই আল্লাহর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নিজের দোষ লুকানোর চেস্ট করবে। কিন্তু কেউ যদি কোন সত্য অভিযোগ করতে পারে, তাহলে আল্লাহর সন্মানের কি অবস্থা হয় সেটা কি ভেবে দেখেছেন? একজন বান্দা যদি আল্লাহর সামনে নামে একটা সত্য অভিযোগ করতে পারে তবে আল্লাহ কেমন সর্বজ্ঞানী, পরম দয়ালু, সর্বশক্তিমান হলেন? জিনিসটা এমন হল যে, আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন (নাউজুবিল্লাহ)। এমন কখনোই হবে না। কেউ কোন সত্য অভিযোগ করতে পারবে না, সেই সুযোগই তিনি দিবেন না। এই কথাগুলো এজন্য বলছি যে - শেষ বিচারের সময় আপনি যদি আল্লাহর কাছে অভিযোগ করেন "আমি পাপ করেছি কারন আমার ভাগ্যে তুমি (আল্লাহ) পাপ লিখে রেখেছ"। এটা যদি সত্য অভিযোগ হয় তাহলে আল্লাহর সন্মান কোথায় থাকে? না, এমনটা কখনোই হবে না, আল্লাহর কাছে কোনদিন সত্য অভিযোগ নিয়ে যেতে পারবেন না। তিনি ভুল করেন না। "...আমার ভাগ্যে পাপ লিখেছ" এই অভিযোগটা মিথ্যা। কারন, আল্লাহ আপনার ভাগ্যে পাপ ও পুন্য দুটোই লিখে রেখেছেন। এর কোনটা বেছে নিবেন সেটা পুরোপুরি আপনার ব্যাপার। তবে আপনার উপরে পুরোটা ছেড়ে দিলেও, নিজের ইচ্ছায় আপনি কোনটা বেছে নিবেন সেটা তিনি আগেই জানেন।

সবকিছু জেনেও এই কাজ করার সুযোগ তিনি এজন্যই দিয়েছেন যেন শেষ বিচারের সময় আপনি "আমাকে তো সুযোগ দাওনি" এই কথাটা বলতে না পারেন।

ভাগ্য বা ভবিষ্যত নির্ধারিত থাকে। হাজার রকমের ভবিশ্যত ও তার ফলাফল নির্ধারিত থাকে। এর মধ্যে থেকে যে কোন একটা ইচ্ছামতন বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। কোনটা বেছে নিবেন সেটা নির্ধারিত থাকে না। অর্থাৎ, কোনটা করবেন সেটা নির্ধারিত থাকে না। সেটা যদি নির্ধারিত থাকতো তাহলে পাপ ,পুন্য ব্যাপারটাই আসত না। যদিও আগেই আল্লাহ জানেন আপনি কোনটা করবেন। এত কিছু না বুঝে, যদি সহজ ইসলামিক বুঝ বুঝতে চান, তাহলে - ভাগ্যর উপর বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে চেস্টা ও দোয়া চালিয়ে যেতেও বলা হয়েছে। এখানেও কিন্তু দুই পক্ষই আছে।

Post a Comment

0 Comments