Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের মজুরি দিতে হবে

ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি দিয়ে
দাওঃ
পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস যা মে দিবস হিসেবে
খ্যাত। এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক
রক্তাক্ত দিন। শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার
আন্দোলন করতে গিয়ে এই দিনে বহু শ্রমিকের রক্ত ঝরে।
শ্রমের সংজ্ঞাঃ অর্থনীতিতে মানুষের দৈহিক ও
মানসিক শক্তি যা উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়,
তাকেই শ্রম বলে। সাধারণভাবে যেকোনো কাজের
জন্য পরিশ্রম বা সময় দানকে শ্রম বলে। অবশ্য যে শ্রম
উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয় না, অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ
থেকে তা শ্রম হিসেবে বিবেচিত হয় না। অর্থাৎ
পরিশ্রম করলেই শ্রম হবে না পরিশ্রমের ফল হতে হবে
উৎপাদন, যা অন্যের প্রয়োজন পূরণ করে। আবার উৎপাদন
হলেই চলবে না, পরিশ্রমের ফলে যে উৎপাদন হলো তার
বিনিময় মূল্য থাকতে হবে। অতএব অর্থনীতিতে উৎপাদন
কাজে পরিশ্রমের বিনিময়ে মানুষের শারীরিক ও
মানসিক
শক্তি সামর্থ্যকে
খাটানোর নাম শ্রম।
ইসলামের দৃষ্টিতে মৌলিকভাবে শ্রমকে দু’ভাগে ভাগ
করা হয়েছে। যথা হালাল শ্রম ও হারাম শ্রম। ইসলামে শুধু
হালাল শ্রম বা হালাল পেশা গ্রহণের অনুমতি দেয়া
হয়েছে। পক্ষান্তরে হারাম শ্রম বা হারাম পেশা নিষিদ্ধ
ঘোষিত হয়েছে।
শ্রমের গুরুত্বঃ
জীবনযাত্রার জন্য, সমাজ ও জাতির উন্নতি অগ্রগতির
জন্য শ্রম এক অপরিহার্য উপাদান। পৃথিবীতে আজ অবধি
যা কিছু মানুষ গড়েছে তা সবই শ্রম বা পরিশ্রমের ফসল।
এজন্য ইসলামে শ্রমের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং শ্রম যে
সম্মানজনক তা-ও বলা হয়েছে। কুরআন ও হাদিস থেকে
জানা যায়, প্রত্যেক নবী-রাসূলই কোনো না কোনো
পেশা অবলম্বন করেছেন। যেমন হজরত আদম আ: ছিলেন
দুনিয়ার প্রথম জমি চাষকারী, হজরত নূহ আ: ছিলেন
ছাগলের রাখাল। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে রাখাল,
দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষের কোনো সম্মান বা মর্যাদা
দেয়া হতো না। রাসূল সা: জাহেলিয়াত যুগের সেই
হীনতার মূলে কঠোরাঘাত করেন এবং ঘোষণা করেন,
আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবীই ছাগল চরিয়েছেন।
সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন হে রাসূল! আপনিও কি
ছাগল চরিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ, আমি
মজুরির বিনিময়ে মক্কার লোকদের ছাগল চরিয়েছি
(বুখারি)। মহানবী সা: এ কথা গৌরবের সাথে উল্লেখ
করে সাহাবিদের জানিয়ে দিলেন যে, কাজ করা,
উপার্জন করা, পরিশ্রম করা সবই গৌরবের। যারা
নিষ্কর্মা বসে থাকে ও উপার্জনহীন থাকে বা বসে বসে
বাপ-দাদার জমানো সম্পদ ভোগ করে তা কোনো
গৌরবের কিছু নয়।
শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদাঃ
ইসলামই শ্রম ও শ্রমিকের যথার্থ মর্যাদা প্রদান করেছে।
আদম আ:
থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত সব
নবী-রাসূলই শ্রমের গুরুত্ব প্রদান এবং শ্রমিকের মর্যাদা
প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বিশেষ করে মহানবী সা: এমন এক
সময় পৃথিবীতে পদার্পণ করেন যখন শ্রমিককে কোনো
মর্যাদা দেয়া হতো না। শ্রমজীবী মানুষকে তখন পশুর
মতো হাটবাজারে বিক্রি করা হতো। অর্থশালী
ব্যক্তিরা শ্রমজীবী মানুষকে ক্রয় করে দাসদাসীতে
পরিণত করত এবং তাদের সাথে অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ
করত। মহানবী সা: ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে
অধিকারহারা সেই শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা সমুন্নত
করেন।
মহানবী সা: বলেন, ‘তোমাদের অধীনস্খ ব্যক্তিরা
তোমাদের ভাই। আল্লাহ যাকে তোমার অধীনস্থ করে
দিয়েছেন তাকে তাই খেতে দাও, যা নিজে খাও এবং
তাকে তাই পরিধান করতে দাও, যা নিজে পরিধান
করো।’ (বুখারি-মুসলিম)। রাসূল সা: বলেন, শ্রমজীবী
মানুষকে আল্লাহ তায়ালা বìধু বলে আখ্যায়িত করেছেন।
শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা : বিশ্বব্যাপী শ্রমিকের
অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে আইএলওসহ বহু
সংস্খা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আজো শ্রমিক পাচ্ছে
না তার শ্রমের যথার্থ স্বীকৃতি। শুধু বাংলাদেশের মতো
স্বল্পোন্নত দেশই নয় উন্নত দেশগুলোতেও শ্রমিক পাচ্ছে
না তার শ্রমের ন্যায্যমূল্য এবং মৌলিক অধিকার। অথচ
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই মহানবী সা:
শ্রমিকের অধিকার ষোলআনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শ্রমিক-মালিক সম্পর্কঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক ভৃত্য-
মনিবের সম্পর্ক নয়, বরং শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক হচ্ছে
ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। মহানবী সা: শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক
প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করছে তারা
তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ
করে দিয়েছেন’ (বুখারি)। রাসূল সা: বলেন, ‘মজুরদের
সাধ্যের অতীত কোনো কাজ করতে বাধ্য করবে না।’
মহানবীর এ কথাই শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য
চিরন্তন রক্ষাকবচ। ইসলাম মালিককে সহনশীল হতে
শিক্ষা দেয় এবং শ্রমিকের দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিতে
উৎসাহিত করে। একদিন এক সাহাবি নবী সা:-কে
জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, চাকরদের অপরাধ
কতবার ক্ষমা করব? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক দিন
সত্তরবার হলেও তাকে ক্ষমা করে দিয়ো (তিরমিজি)।
মালিকের অভদ্র আচরণকে ঘৃণা করে নবী সা: বলেছেন,
অসদাচরণকারী মালিক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে
না। হজরত আনাস রা: বলেন, ‘আমি নবী সা:-এর অধীনে দশ
বছর কাজ করেছি, তাঁর খেদমত করেছি। কিন্তু তিনি
কোনো দিন আমাকে ভৎসনা করেননি। কোনো দিন
বলেননি, এটা এভাবে কেন করেছ, ওটা ওভাবে কেন
করোনি? (বুখারি)।
শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কের অবনতির মূল কারণ হলো
মজুরি ও আচরণগত সমস্যা। এ ব্যাপারে রাসূল সা:
বলেছেন, ‘তোমরা শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর আগেই
পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)। অন্য দিকে
শ্রমিকও তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন
করবে। এ সম্পর্কে মহানবী সা: এরশাদ করেছেন, ‘শিল্পে
মজুর যখন কাজ করবে, তখন সে উত্তমরূপে কাজ করবে।
আল্লাহ তায়ালা এটাই ভালোবাসেন এবং তা পছন্দ
করেন।’ (বায়হাকি)।
উপসংহারঃ
শ্রম এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কে ইসলামী বিধান
যথাযথভাবে পালন করা হলে উভয়পক্ষই লাভবান হবে। আর
এতে করে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের যে দূরত্ব রয়েছে
তাও থাকবে না।
এম এ মতিন
লেখক : প্রধান শিক্ষক, কায়েম বক্শ আদর্শ
উচ্চবিদ্যালয়, উত্তরখান, ঢাকা
সুত্রঃ
নয়াদিগন্ত থেকে (২৯.০৪.২০১১)


Post a Comment

0 Comments