সূর্য ও ঘুরে পৃথিবী ও ঘুরে :
কোরআনের আলো
এক সময় সূর্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে এ
বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে
অনেক মতানৈক ছিল। যেমন,
প্রাচীনকালে
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে
করতেন, মহাবিশ্বের সব কিছুই
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু
“পৃথিবী স্থির।” এ ধারণাটা
পরবর্তী বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভুল প্রমাণিত হয়।
পোল্যান্ডের একজন জ্যোতিবিজ্ঞানী যার নাম
“কোপানিকাস” তিনি বলেছিলেন, পৃথিবী সূর্যের
চতুর্দিকে ঘুরে। কিন্তু কেউই তার উক্তিটি বিশ্বাস
করেনি। পরবর্তীযুগে বিজ্ঞানী “নিউটন” আবিস্কার
করেন, যে পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে এবং পক্ষান্তরে
সূর্যও তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে। অথচ কুরআনুল কারীম
আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শত বছর আগেই একথা বলে
দিয়েছে যে, সূর্য ও পৃথিবী উভয়টাই ঘুরে।’
কুরআনে কারীম বলছে- ১. তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও
দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ
করে। [সূরা আম্বিয়া : ৩৩]
২. “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা
পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।” [সূরা
ইয়াসীন : ৩৮]
৩. “চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি।
অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।” [সূরা
ইয়াসীন : ৩৯]
৪. “সূর্য নাগাল পেতে পারেনা চন্দ্রের এবং রাত্রি
অগ্রে চলতে পারে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন
কক্ষপথে সন্তরণ করে। [সূরা ইয়াসীন : ৩৮-৪০]
বিশ্বখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন, বিজ্ঞানী আল্লামা
ত্বানত্ববী আল জাওহারী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা
আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, উক্ত
আয়াতটি ব্যাপক অর্থ সম্বলিত। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র, তারকা
ও পৃথিবী, মোটকথা প্রত্যেকটি নক্ষত্র নিজ নিজ
কক্ষপথে ঘুরছে। [আল জাওয়াহিরু ফী তাফসীরিল
কুরআনিল কারীম : ১০/১৯৯]
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা আহমদ মোস্তফা
মারাগী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা ইয়াসীনের ৪০নং
আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, প্রত্যেকটি গ্রহ-
নক্ষত্র অর্থাৎ পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে
সাঁতার কাটছে (ঘুরছে)। যেভাবে মাছ পানিতে সাঁতার
কাটে। সূর্য ঘুরছে নিজ কক্ষপথে। ‘সূর্য’কে একবার
প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে একদিন ও একরাত।
পক্ষান্তরে “পৃথিবী”-কে একবার প্রদক্ষিণ করতে চন্দ্রের
সময় লাগে একমাস। [আত তাফসীরুল মারাগী : ২৩/১০]
বিশ্বনন্দিত মুফাস্সীরে কুরআন আল্লামা মাহমুদ হিজাযী
রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতের
ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, আল্লাহ পাক পৃথিবীর বুকে
পাহাড়সমূহের বোঝা রেখে দিয়েছেন; যাতে করে পৃথিবী
মানব মণ্ডলীকে নিয়ে ঝুঁকে না পড়ে। পৃথিবী নিজ কক্ষে
ঘুরে এবং সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। (আল্লাহ্) সূর্য ও
চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন যেন প্রত্যেকটি নিজ নিজ
কক্ষপথে ঘুরে। [আত তাফসীরুল ওয়াজেহ : ১৭/৫২৮]
উক্ত আলোচনার সারাংশ এই দাড়ালো যে, চন্দ্র ঘুরে
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে; পক্ষান্তরে পৃথিবী ঘুরে সূর্যকে
কেন্দ্র করে। সূর্য ঘুরে নিজ কক্ষপথে। এরপর আরশের
নিচে আল্লাহকে সিজদা করে অনুমতিক্রমে পূণরায় পূর্বে
গিয়ে উদিত হয়।
যেদিন তাকে (সূর্য) পূর্বদিকে উদয়ের অনুমতি দেয়া হবে
না সেদিনই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
1 Comments